দেবমাল্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু'টি কবিতা

Debmalya Bandyopadhyay, 17MS

25/09/2019

এখন ফসিল হয়ে আছো
মাঝরাতের কল্প মরু, আমার
গলার শিরায় ঘাপটি মেরে শোনো
অন্ধ বাতাসের কান্না।

একটা দুটো নীলচে অভিজ্ঞতা
আঁকড়ে আছে পরিমলখানি,
ছুঁয়ে যায় মাছরাঙার ঠোঁট
দুপুর-কৈশোর যাযাবর।

অস্ত শেখে একলা বাঁধা খেয়া
ঊর্মিডগায় বুকের পাথরমালা;
হাত ছুঁয়েছো দীর্ঘ বছরখানেক
গোলাপকাঁটায় সময় লেগে আছে।

আষাঢ়বেলায় চৌধুরীদের মাঠে
লাটাই টানে আকাশ বাঁধা খেলা
মেঘপালকের বর্ষাভেজা বুকে
কিশোরবেলার স্বপ্ন শুয়ে আছে।

ঠাকুমাকে

তুমি সাপ দেখেছো?
অন্ধকারে পিছলে পিছলে কেমন তোমার
দু'টো রাত কেটে গেল এই মহাদেশে।

রাতে যেমন কালোয় কালো হলে
জ্বর ছাড়ে মেঘের আশ্রয়
তুমি একটু একটু করে এবার দেখতে পাবে
বহরমপুর, ময়মনসিং, লালবাগ, ধুবুলিয়া থেকে
কীভাবে তুমি ধোঁয়া হয়ে উঠে আসছো

তুমি হাসপাতালে ছিলে সারাজীবন।
আঙুলের ডগা দিয়ে তুমি ঝাঁ-চকচকে দেওয়ালে
মৃত্যুর মানচিত্র আঁকতে পারো,
যে শিরার জন্য এত খোঁজ, তার রক্ত দিয়ে তুৃমি পাঁচটা শরীর রঙ করেছো কত বছর
এখন কেউ দেখছেনা তোমার চুলে ছয় যুগের জট
ঘুম হয়ে লেগে আছে

পরমাণুগুলো পড়ে থাকে
স্মৃতি আসলে পচনশীল পাঁউরুটি—
আমাদের দুজনের মাঝখানে সময় ছত্রাকের মতো তোমাকে ঢেকে দিচ্ছে।
এটা কি তোমার মেয়েবেলা মুখের ওপর ফুটে আছে? হাসপাতালের আলো হয়ে ধরে আছে আমাকে শক্ত করে
বুকের ওঠানামা যন্ত্র না।

জলের ছোঁয়ায় শিকড় কেঁপে ওঠে
নগ্নতা সব ছিন্নভিন্ন বুকের
হাহাকার আকাশপানে ছুড়ে
পাশের ঘরে কয়েকশো ফুল ফোটে।

আর কোনো ঘৃণা নেই এখানে— আগুনের প্রবেশপথ ছুঁয়ে আছে কেবল ভালোবাসার আগল
সারাজীবনের মুখগুলো ভিড় করেছে মাটির নীচে
সারাজীবনের মিথ্যা পদ্মার জলে ভেসে যাচ্ছে কুয়াশা হয়ে
একটা জীবন এদিকওদিক হলে কেউ হারায়না
কেউ হারায়নি কোনদিন নবারুণবেলায়
একলা তুমিই সকল যন্ত্রকে ছুটি দিয়ে ছুটে চলেছ
ছন্দপতনের ওপারে।