অনমিত্র রায়ের তিনটি কবিতা

Anamitra Roy, 17MS

25/09/2019

নীল

তুমি আমাকে এক ফালি নীল দিয়েছিলে,

বসন্তের পলাশ-ছোঁয়াচ থেকে যত্নে বাঁচিয়ে রাখা

এক খন্ড আকাশের নীল।

হাতের মুঠোয় বন্ধ করিয়েছিলে আমার,

বলেছিলে,

“সাবধানে রেখো! আমার জন্যে!”

তারপর হঠাৎ...

যেমন কোনো মিঠে ফাল্গুনী দুপুরে

সহসা তীব্র হয়ে ওঠে রোদ চৈত্রের আবাহনে,

তোমার গন্ধ মুছে গেল আমার চোখের পাতা থেকে।

মুঠো আমি খুলিনি।

তোমার জন্য যত্ন করে বাঁচিয়ে রাখা

তোমার প্রিয় নীল

রেখেছি আমি, তোমার অপেক্ষায়।

তারপর

তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে খেয়াল করে ওঠা হয়নি,

ত্বক চুঁইয়ে

কখন রক্তে মিশতে লেগেছে নীল।

বিষক্রিয়ায়

নীল লেগেছে হৃদযন্ত্রে

নীল ধরেছে মনের ভেতর

তোমার প্রতীক্ষায়।

ভেবেছিলাম সঞ্চয়ে রাখব অক্ষত

প্রয়োজনে তুলিতে অল্প মাখিয়ে

রাঙিয়ে নেব কবিতার ক্যানভাস।

তোমার নীলে তোমাকে এঁকে নেব, নৈবেদ্যে।

আমার তুলি থমকে গেছে হৃদয় ভাঙার শব্দে।

তোমার রেখে যাওয়া নীল

তোমার হাতের ছোঁয়ার মতো আঁকড়ে ধরেছি

হারিয়ে ফেলার ভয়ে।

আর, তোমার নীলের গ্রাসে

আমিও নীলিম হয়ে উঠেছি ধীরে ধীরে,

মাঝ শ্রাবণের বর্ষাগর্ভবতী মেঘের নীল।

নভেম্বর

শুকনো পাতার ওপর দিয়ে নভেম্বরের বাতাস বয়।
ভয়ে কাঁপে গাছের দল,
ফুলহীন সব পদ্মপাতায়
শিশির ঝরায় চোখের জল।
কাঁপন লাগে আজ নতুনের
কাঁপন লাগে নতুন শীতের,
পাতার মাঝে, বুকের মাঝে
রইবে কিনা পুরানো সব
জমানো স্মৃতি, জমানো ধুলো...
কেউ জানেনা জবাবগুলো।
বুকের মধ্যে জমছে ক্ষয়।
সমাপ্তির এই সূচনাতেই নভেম্বরের জন্ম হয়।
পুড়ে যাওয়া তুবড়ির খোল
উড়ে আসা ফানুসগুলো
ধুলোয় লোটায় কদরবিহীন
কয়েকটি রাত আলোয় রঙিন
করেই তাদের জীবন শেষ
প্ৰয়োজন শেষ, শুকনো পাতায়
মিশে যেতে চায়, আগুন-পোড়ানো
বুকের জ্বালা নেভাতে চায়।
বেঁচে ওঠার চেষ্টা মানে
এখন সময় অপচয়
পুরোনো জীবন আঁকড়ে থাকা নভেম্বরের স্বভাব নয়।

অক্টোবরের আলো

সব খোঁজার শেষ হয়েছে যে গলির পথে,
রাত্রি এসেছে ঘিরে, গহীন, কালো।
হেরে যাওয়া মুখ দেখেছে আবার ফিরে
পথের দু-ধারে অক্টোবরের আলো।

শেফালীরা মরে চাঁদের আলোর খোঁজে-
টুনিদের মাঝে হারিয়ে গেছে জোৎস্না।
আতরগন্ধী যে চোখেরা কাজল মাখে
আরণ্যমনের তারা আর কেউ না।

দশমীতে ডুবে বেঁচেছে দুগ্গা-অসুর,
গঙ্গার জলে মুক্তি পেয়েছে মাটি।
অদ্রাব্য প্রাণ মুঠোয় রেখেছি জমা,
জোনাকি চোখের খোঁজেতে একলা হাঁটি।

হেঁটে পার হই আলোয় আলানো শহর,
আলোর নিচেতে দুঃখেরা দেখি জমা;
আদিম সে দুখ হাতছানি দিয়ে ডাকে।
বিস্মৃতদিন করেনি যাদের ক্ষমা।

রাত্রির কাছে আবদার করি ঘুমের।
ঘুমের কাছে স্বপ্ন-ভিখারী হই।
স্বপ্নে দেখেছি শান্তি পাবার আশা,
প্রহর গুনেছে লক্ষ প্রেমের বই।