In The Zone

Anuraj Laha, 16MS

25/09/2019

“Let everything that’s been planned come true. Let them believe. And let them laugh about their passion. Because what they call passion is not some emotional energy but just the friction between their souls and the outside world. And most important, let them believe in themselves. Let them be helpless like children, because weakness is a great thing and strength is nothing. ”

পূর্ব-ইউরোপের শিল্পবিপ্লববিধ্বস্ত এক জরাজীর্ণ শহর থেকে তিন ব্যক্তির তথাকথিত “The Zone” এ যাত্রা এবং যাত্রাকালীন দার্শনিক কথোপকথন রাশিয়ান চিত্রপরিচালক আন্দ্রেই তারকভস্কির পঞ্চম ছবি “Stalker” এর মূলবিষয়বস্তু। Strugatsky ভ্রাতৃদ্বয়ের কল্পবিজ্ঞানমূলক উপন্যাস “The Roadside Picnic” থেকে অনুপ্রাণিত এই ছবির একটি শহরে বছরকুড়ি আগে আসা এক অজানা মহাজাগতিক বস্তুর আঘাতে সৃষ্টি হয় রহস্যাবৃত “The Zone”। সেখানকার বাসিন্দারা রহস্যজনকভাবে উধাও হতে থাকে। লোকমুখে মিথ ছড়ায়, মানুষের অন্তর্নিহিত মনস্কামনা পূরণ করার অলৌকিক ক্ষমতা আছে এই ‘Zone’-এর। সরকারি নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঘিরে ফেলা হয় জায়গাটিকে – শহরে উদ্ভব হয় এক নতুন পেশার – Stalker। একদিকে পথপ্রদর্শক, Coyote এবং অন্যদিকে আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা এইস্টকাররা সরকারি নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এড়িয়ে কৌতূহলী মানুষদের নিয়ে আসে Zone – এ।

এরকমই একজন স্টকার (Alexander Kaidanovsky), এক কল্পনাশক্তিলুপ্ত লেখক (Anatoly Solonitsyn) আর এক আবিষ্কারপিপাসু পদার্থবিদ (Nikolai Grinko) কে নিয়ে যাত্রা শুরু করে “The Zone”-এর উদ্দেশ্যে।লৌহ-লোষ্ট্র-কাষ্ঠ-প্রস্তরসর্বস্ব শহর থেকে একটি কারখানার ভগ্নস্তুপের ভিতর দিয়ে সেনাবাহিনীর নজর এড়িয়ে পরিত্যক্ত রেললাইনে পড়ে থাকা এক টিট্রলিতে করে তাদের যাত্রা শুরু হয়। জরাজীর্ণ শহর থেকে ‘Zone’ এ এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা যায়। ওদের লক্ষ্য ‘Zone’-এর কেন্দ্রস্থিত একটি ‘মিরাকেলরুম’ – যেখানে গেলেই হবে ইচ্ছেপূরণ। এরপর তাদের মধ্যে চলতে থাকে একের পর এক দার্শনিক আলোচনা।

স্পয়লারের স্বার্থে গল্প নিয়ে বেশি দূর না গিয়ে আসা যাক চলচ্চিত্রায়ণের দিকে। ছবির শুরু থেকে শেষ অবধি বর্ণমাধ্যম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। প্রথম কয়েকটি সিক্যুয়েন্স শ্যুট করা হয়েছে সেপিয়ায় ,যা নিম্নমানের রিলের সঙ্গে মিলে জরাজীর্ণ শহরের জীবনযাত্রার রিক্ততাকে তুলে ধরে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে যান্ত্রিক শব্দের প্রাবল্য। শহুরে জীবনের একঘেয়েমির ব্যাপকতা লেখকের কল্পনাশক্তিকে ভোঁতা করে দেয় – কোনো মিরাকেল বা UFO-র কল্পনা তো দূরের কথা, বহুচর্চিত বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলও তাঁর কাছে হয়ে ওঠে “…triangle ABC which is equal to trangle A’B’C’”। এই একঘেয়েমিকে আরও প্রকট করেছে তারকোভস্কির বেছে নেওয়া শিল্পাঞ্চলের ভগ্নস্তূপ।

রেললাইনের উপর দিয়ে Zone –এ যাত্রার দৃশ্যে Close-up লেন্স –এর ব্যবহার উল্লেখের দাবি রাখে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রের মুখে ক্যামেরা ফোকাস করায় তাদের মুখের অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে ক্যামেরায়। এর পাশাপাশি অত্যন্ত ধীরগতির, প্রায় শব্দবিহীন ঘটনাপ্রবাহ এক অজানা স্থানে যাওয়ার সময় লেখক আর পদার্থবিদের উত্তেজনা ও ভয়মিশ্রিত মানসিক পরিস্থিতিকে প্রকাশ করেছে। এই দৃশ্যে আর একটি উল্লেখ্য বিষয় হল লেখক আর পদার্থবিদের বারংবার পিছনের দিকে (অর্থাৎ অতীতের দিকে) তাকানো আর স্টকারের সামনের দিকে অর্থাৎ ভবিষ্যতের দিকে স্থির দৃষ্টি।

ট্রলি ‘Zone’-এ পৌঁছয় – বর্ণমাধ্যম পরিবর্তিত হয় কালারে — ফুটে ওঠে জোনের স্নিগ্ধতা আর Organic Greenery। এর সঙ্গে নিচুমানের রিল, কুয়াশা আর নিস্তব্ধতা মেশানো পরিমণ্ডল এক অন্যরকম গা-ছমছমে প্রকৃতিমুখর পরিবেশে দর্শককে নিয়ে যায় – “So beautiful here, not a single soul”। পাঁচবছর কারাবাসে কাটানো স্টকার – যার কাছে পৃথিবীর সর্বত্রই জেলখানা – Zone-এ এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে – নিজেকে একাত্ম করে নিতে থাকে জায়গাটার সঙ্গে। বর্ণমাধ্যমের এই সামান্য পরিবর্তন সম্পূর্ণ আলাদা দুটি পরিমণ্ডলে দর্শককে নিমজ্জিত করে। বাজে রিলে তোলা অপরিষ্কার দৃশ্য সেপিয়াতে হয় নগরজীবনের শুষ্কতা আর কালারে হয়ে ওঠে Zone –এর রহস্যসৃষ্ট মানসিক উদ্বেগ।

ছবির বিভিন্ন অংশে প্রতীকী অর্থে বিভিন্ন পশুপাখি ব্যবহার করেছেন আন্দ্রেই। ছবির মাঝামাঝি একটি কালো কুকুর দেখা যায়, বিভিন্ন সমালোচক বিভিন্নভাবে যার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কারো মতে কুকুর বিশ্বস্ততার প্রতীক যা স্টকার ও জোনের সংযোজক। কেউ আবার বলেছেন কুকুরটি হল ভগবান স্বয়ং – যিনি Zone-এর রক্ষক। ছবির আরেকটি দৃশ্যে একটি বাজপাখি দেখিয়েছেন তারকোভস্কি, যাকে মূলত Zone-এর রক্ষক হিসাবেই দেখা হয়।

ছবির শেষাংশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে স্টকারের মেয়ে মাঙ্কি – প্রোফেসরের মতে “the victim of the Zone”। কথিত আছে স্টকারের বারংবার জোনে যাতায়াতের ফলশ্রুতি বিকলাঙ্গ মাঙ্কি। এই দৃশ্য স্টকারের শহরে শ্যুট করা হলেও এটি কালারে তোলা। এই দৃশ্যে দেখানো হয় মাঙ্কি নিজের চোখের দৃষ্টি দিয়ে টেবিল থেকে একটি গ্লাস ফেলে দিচ্ছে। মাঙ্কির এই বিশ্বাস অমান্য করে পদার্থবিদ্যার সূত্র, ছাপিয়ে যায় লেখকের কল্পনাশক্তি।

ছবির প্রায় সব দৃশ্যই শ্যুট করা হয়েছে কম আলোয়। এর ফলে আলো-আঁধারির খেলায় সৃষ্টি হয়েছে এক মায়াময় আধ্যাত্মিক পরিবেশ যা দর্শককে নিয়ে যায় এক দীর্ঘস্থায়ী হ্যালুসিনেশনে, এই হ্যালুসিনেশনের প্রভাব থেকে যায় সিনেমার পরেও। ছবির শ্যুটিংস্পট বাছাতেও পরিচালক হিসেবে তারকোভস্কির দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। স্টকারের শহর যেমন শ্যুট করা হয়েছে কারখানার ভগ্নাবশেষে, তেমনি Zone শ্যুট করা হয়েছে প্রকৃতিমুখর স্নিগ্ধ সবুজ জায়গায়। ধীর ঘটনাপ্রবাহ, ধোঁয়া-ধোঁয়া পরিবেশ ও দর্শন স্টকার চরিত্রটিকে এক আধ্যাত্মিক মাত্রা দেয় – প্রকৃতির ছন্দকে তুলে ধরে। ছবির মূল গল্প সাধারণ হলেও শাশ্বত। তারকোভস্কির কথায়, “I only aspired to the simplicity and discretion of the entire architecture of the film”। সুদক্ষ পরিচালনা, কাব্যিক চলচ্চিত্রায়ণ, Close-shot, ধীরগতির ঘটনাপ্রবাহের মিলনে “Stalker” হয়ে উঠেছে তারকোভস্কির মাস্টারপিস। কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরষ্কৃত এই ছবি বহু যুগ ধরে সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে চর্চিত হতে থাকবে আর অনুপ্রাণিত করবে অনেক চিত্র পরিচালককে।

চলচ্চিত্র ঃ স্টকার (১৯৭৯)

পরিচালক ঃ আন্দ্রেই তারকোভস্কি