কলেজের গল্প

Saptarshi Maji, 13MS/18RS

25/09/2019

বিশেষ দিন (সত্য ঘতনা অবলম্বনে ১০)

-কাল তো সেই বিশেষ দিন।
-খুব এক্সসাইটেড মনে হচ্ছে!
-বটেই তো! তবে এবারটা ঝোলাবে মনে হচ্ছে।
-আমারও তাইই মনে হচ্ছে রে!
-তা যাবি নাকি না ঘরে বসেই?
-যাব কোথায়? ঘরেই দেখব।
-দেরী হবে তো।
-দেরী! খবর পেলেই হল।
-তাই নাকি! কোয়ালিটি তো ভালো হবে না।
-তুই কিসের কথা বলছিস বল তো।
-কেন? পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ান। কালকেই তো রিলিজ করবে। তারপর সচিনের অটোবায়োগ্রাফিটাও তো...
-ওহ
-তুই কিসের কথা ভাবলি?
-কিসের আবার? সেমিস্টার রেজাল্টের।
-কাল সেমিস্টার রেজাল্ট!!
-তুই জানতিস না!

আর কোন কথা বাড়াইনি। কোনমতে খাওয়া শেষ করে উঠে চলে এলাম। কে জানে, কথায় কথায় আবার ঝুলি থেকে কী না বেরিয়ে পড়ে!

সত্য ঘটনা অবলম্বনে ৯
এক চুরি!

-(হন্তদন্ত হয়ে) দাদা, এক দেখেছেন?
-এক!
-হ্যাঁ দাদা, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
-খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
-হ্যাঁ দাদা, মনে হয় চুরি হয়েছে কালরাতে।
-এক চুরি!
-(কাঁদোকাঁদো স্বরে) এক-টা তো গেল, এখন আমার চাকরিটা না যায়।
-বলেন কি!
-হ্যাঁ দাদা। আপনি কিছু জানেন?
-একটু ঝেড়ে কাশবেন প্লিজ। কার এক? কিসের এক? কিছু বুঝতে পারছি না।
-আরে কার আবার, দশের এক।
-দশ আবার কোত্থেকে এলো?
-(অবাক হয়ে) দশ জানেন না! লেকচার হল কমপ্লেক্সের দশ।
-আমি কিন্তু কিছুই মাথামুন্ডু বুঝছি না।
-আরে দাদা, ওই লেকচার হল কমপ্লেক্সে কলেজের দশ বছর উপলক্ষ্যে যে টেনথ ইয়ার অব এক্সসিলেন্সের কাট-আউট বানানো হয়েছিল না, তার 'এক'-টা কে বা কারা কাল রাতে নিয়ে হাওয়া হয়েছে। এখন শুধু 'শূন্য'-টা পরে আছে।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে...
সাইন্স

গতকাল বাড়ি থেকে হস্টেলে ফিরছি। এমন সময় দেখি হস্টেলের কাছাকাছি বেলগাছে দুটো ছোকরা ঢিল ছুঁড়ে বেল পাড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই তাদের ঢিল আর লাগছে না। তাড়া নাই, আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে গেলাম রগড় দেখতে। একসময় মনে হল, দেখি একটা চেষ্টা করে। দেখেশুনে একটা ঢিল ছুঁড়লাম। এক ঢিলে দুই পাখি না উড়ুক বেল বাবাজী মাটিতে। ছোকরাদুটো অমনি আমার দিকে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে বেলটা কুড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে লাগলো। আমি উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে হস্টেলে ফিরতে যাব এমন সময় শুনি একটা আরেকটাকে বলছে, 'সব ইসেরের ছেলে। কেমন সাইন্স লাগালো দেখলি।' আমি হাঁ করে ওদের দিকে তাকিয়ে 'সাইন্স' খুঁজতে লাগলাম।

অন্যগল্প

সত্য ঘটনা অবলম্বনে ৮ওকে গুগল!

-(ছাদের দিকে তাকিয়ে ল্যাদ খেতে খেতে) মা, একটা ম্যাজিক দেখবে?

-(রান্নাঘরে খুন্তির ঠনঠন শব্দটা একটু কমে এল) ম্যাজিক!

-হ্যাঁ, একবার ঘরে এস। একটা ম্যাজিক দেখাবো।

-(ছ্যাঁকছ্যাঁক শব্দটা একটু ভরাট হয়ে এল, তার সাথে বক্তার কণ্ঠস্বরও) কত আর ম্যাজিক দেখাবি বল! ম্যাজিক দেখতে দেখতে আমার হাড়-মাস ভাজা ভাজা হয়ে গেল। ক্লাস ইলেভেন-টুয়েল্ভের ফার্স্ট হওয়া ছেলেটা কলেজে উঠে কোনমতে পাস করছে। যা করার তাড়াতাড়ি কর, মাংস চাপা দিয়ে এসেছি।

-(আগের মতই হেলান দিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে) আমার ফোনটা টেবিলে আছে?

-(গলার স্বর তিন নম্বর সা ছুঁয়ে) হ্যাঁ হ্যাঁ। আমি তো তোর কাজের লোক হই। নিজের ফোন নিজে আনবি। ম্যাজিক দেখাবার নাম করে ফোন আনার ধান্দা! আমি কিছু বুঝি না না?

-(ব্যস্তসমস্ত হয়ে) আরে শোনই না।

-(হাতের খুন্তি দেখিয়ে) ফোন আনতে আমি পারব না।

-সে আনতে হবে না। তুমি শোন তো।

-বল।

-আমার ফোনটা টেবিলে আছে তো?

-হ্যাঁ।

-বাবার ফোনটাও টেবিলে আছে?

-(মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে) তোর বাবার কথা বাদ দে। হাজার দিন বাইরে যাবে, ফোন ফেলে যাবে। ঘরে আপদ বিপদ হলে...

-(চোখটা হাল্কা বন্ধ করে) ম্যায় হুঁ না।

-(শারীরিক ভঙ্গিমায় এবার একটু ভারত-নট্যম এসে মিশল) হ্যাঁ হ্যাঁ। এলেন আমার বীরপুরুষ কথা থেকে। রেজাল্টে রক্ষা পায় না আবার ঘর রক্ষা করবেন, ম্যাও হুনা

-হয়েছে। ফোনটা আছে তো?

-হ্যাঁ আছে।

-আর আমি এখানে আছি?

-আমাকে উদ্ধার করে দিয়েছ। (উদ্ধার শব্দটার উপর একটু বেশী জোর দিয়ে)

-আমি এখান থেকে না নড়ে বাবাকে ফোন করব।

-এর বেশী তুমি আর কি করবে! পারলে খাবারটাও আমাকেই চিবিয়ে দিতে হয়।

-এবার চুপ! কোন কথা না। আমি ফোন করব।

শ্রোতার কিঞ্চিৎ ভ্রুকুঞ্চন দেখা দিল। আর বক্তা পাশের ঘরে কাউকে ডাকার মত গলায় চেঁচিয়ে উঠল, 'ওকে গুগল, কল বাবা'

-(কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পর) কীরে! কি হল!

-আরে দাঁড়াও দাঁড়াও।

এমন সময় টেবিলের উপর রাখা একটি ফোন থেকে ভেসে এল, 'উই হ্যাভ ফউন্ড টু বাবা ইন ইওর কন্ট্যাক্ট লিস্ট। হুইচ বাবা ডু ইউ ওয়ান্ট টু কল, বাবা-ওয়ান অর বাবা-টু?'

পিওর বায়োলজি

আট নাম্বারটা খেতে যাব, দেখি সরে গেল।
রুপুটা এরম করবে বুঝতে পারিনি। বেশী কিছু তো চাইনি, ফার্স্ট ডেটিংয়ে একটু চুমু খেতে চেয়েছিলাম মাত্র। তাতে একটা রিলেশন ভেঙে দেয় কেউ! তাও যাওয়ার আগে ইতর, ছোটলোক এইসব!
যাইহোক, দুর্ভাগ্যের কথা ভাবতে ভাবতে আরেকবার ট্রাই নিলাম। আবার সরে গেল।
'আর খাবই না' বলে উঠতে যাব, দেখি এবার টেবিলটাও আপনা আপনি সরে গেল। একদিকে ভালোই হল, আমায় আর কষ্ট করে ঠেলতে হল না। কিন্তু উঠতে গিয়ে আর উঠতে পারি না, চেয়ারটা যেন সর্বশক্তি দিয়ে টেনে ধরেছে। আমিও জেদী পাবলিক, উঠেই পড়লাম শেষমেশ। বিল মিটিয়ে বাইরে এসে সাইকেলে চড়তে যাব দেখি সাইকেলটা আমায় দেখে একহাত দূরে ছিটকে পড়ল। ওকে আর ঘাঁটালাম না, পায়ে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগলাম হচ্ছেটা কী আমার সঙ্গে!
কিছুটা যাওয়ার পরই বুঝতে পারলাম এ পুরো চুম্বক কেস। চুম্বকের নর্থপোল-নর্থপোল বিকর্ষণ করে, আমার ক্ষেত্রেও তাই। প্রথমে গ্লাস, তারপর টেবিল আর শেষে সাইকেল। আর যেহেতু টেবিল আর চেয়ার নর্থপোল-সাউথপোল, আমি আর চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারছিলাম না।
মদ জীবনে প্রথমবার। তাও রুপু ওরকম করাতে। মদ খেয়ে লোকে মাতাল হয় শুনেছি কিন্তু এরকম যে হয় তা জানতাম না, আমি চোখে যা দেখছি নিজে তাই বনে যাচ্ছি! যাইহোক, সাইন্সের ছেলে। পরখ করে দেখা যাক। সামনে তাকাতেই চোখে পড়লো একদল লোক হেঁটে আসছে। এদের মডেল সিস্টেম বানালে কেমন হয়? কিন্তু ওদের দিকে কিছুটা এগোতেই দেখি ওরাও ছিটকে পালাল। তার মানে এক্সপেরিমেন্ট সফল, হাইপোথিসিস এখনো পর্যন্ত নির্ভুল। এবার একটা ল্যাম্পপোস্টের নীচে গিয়ে দাঁড়ালাম। উপরের দিকে তাকাতেই, একী! একটু আগেও দেখা বাচ্ছা ল্যাম্পপোস্টটা কত্ত বড় হয়ে গেছে। আর আলোটাও সেই কোথায় চলে গেছে।
বুঝতে পারলাম আলো দেখে আমিও আলো হয়ে গেছি। আলোর গতিবেগে ছুটতে শুরু করলাম। টু পয়েন্ট নাইন নাইন সেভেন নাইন টু ফোর ফাইভ এইট ইনটু টেন টু দি পাওয়ার এইট মিটার পার সেকেন্ড। ছুটতে ছুটতে বুঝলাম পিছনে কতগুলো কালু-ভুলুও ছুটছে সাথে। পিছনে আর তাকালাম না, পাছে ওদের মতো হয়ে যাই।
বেশ অনেকক্ষণ ছোটার পর বাড়ির গেটে পৌঁছালাম। আইনস্টাইন আর যাই বলে যান না কেন এটা কোথাও বলেননি যে মদ খেলে 'লেন্থ এক্সপ্যানশন' হয়। নাহলে আলোর গতিবেগে বাড়ি পৌঁছাতে এতো দেরী হবে কেন? আমার বাড়ি কি সূর্য থেকেও দূরে নাকি!
যাইহোক, পুরানো এক্সপেরিয়েন্স থেকে বুঝলাম আমি আপাতত দরজাতে পরিণত হয়েছি। সুতরাং আমাকে কিছু করতে হল না, দরজা আপনা আপনিই খুলে গেল। তাকিয়ে দেখি সামনে মা, চোখদুটো লাল হয়ে গেছে।
মা কি আমার থেকেও বেশী মদ খেয়েছে নাকি! আমাকে দেখে মায়ের চোখ লাল হচ্ছে! যাইহোক, ঘরে ঢুকতে গেলাম গদাম করে পিঠে কিছু একটা এসে পড়লো। বেলনা। মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। হাজার হোক সোনার টুকরো ছেলে প্রথমবার মদ খেয়ে বাড়ি ঢুকেছে, হাতা-খুন্তি কিছুই বাদ গেল না।
কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই বুঝে পাচ্ছি না, আমি মাকে দেখা মাত্র মায়েরও তো ছিটকে যাওয়ার কথা। এলোপাথাড়ি মারগুলো এসে পড়ছে কী করে?
ভাবতে গিয়ে বুঝলাম, পিওর বায়োলজি। ছেলেরা আর যাই হোক না কেন, মা হতে পারবে না কোনোদিন।।