ফিরে ফিরে যাই

Mrinmoy Pal, 13MS

25/09/2019

অ্যাডমিশন-এর জন্য যখন এলাম প্রথম, কাঁচরাপাড়া স্টেশন থেকে বাস ধরেছি জাগুলির। নামলাম আড়াই নম্বর গেটে। নতুন যারা আইসারে, তাদের হয়তো জানা নেই আড়াই নম্বর গেট। দু-নম্বর আর তিন-নম্বর গেটের মাঝে একটা জায়গায় দেওয়াল পড়ে গেছে, ঢুকেই সোজা এগোলে লীলাবতী হোস্টেল, জে সি বোস বিল্ডিং। সেটাই আড়াই নম্বর। রেজিস্ট্রেশন হল বিসিকেভির অডিটোরিয়ামে। শুনলাম আমরা নতুন হোস্টেল পাচ্ছি, পার্মানেন্ট ক্যাম্পাসে। বাক্স প্যাটরা নিয়ে বাসে চড়লাম আমরা, "ঐ" ক্যাম্পাস যাবো। জানলার বাইরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। ভাঙাচোরা পিচ রাস্তা ধরে, লাফাতে লাফাতে এগোচ্ছি আমরা। দুপাশে শুধু সবুজ, বুড়ো গাছ গুলো হাত-পা ছড়িয়ে ছায়া বিলিয়ে দিচ্ছে শেষ জুলাইয়ের ভ্যাপসা গরমে। এসবিআই গ্রাউন্ড, হরিণঘাটা পোস্টঅফিস, ঘুঙরু শেড পেরিয়ে বাস ঢুকলো নতুন ক্যাম্পাসে।ক্যাম্পাস? কিছুই তো নেই এখানে! ২০০ একর সবুজের মাথায় একটা বিশাল নীল আকাশ। একটা প্রি -ফ্যাব, সামনেই তারকদার দোকান। ডিম্-পাউরুটি আর ঘুগনি-মুড়ি পাওয়া যায়। অনেকটা দূরে দুটো পলিমার সায়েন্সের ছোট ল্যাব। একদম অন্য প্রান্তে সাত নম্বর গেট, সেদিক থেকে বেরিয়ে বাস ধরলে নাকি কল্যাণী যাওয়া যায়। আর ক্যাম্পাসের একদম মাঝা-মাঝি একটা হাফ-তৈরী চারতলা বিল্ডিং। আমাদের হোস্টেল। এ, বি, সি ব্লক মিলে রেডি আমাদের হাফ-হোস্টেল। ডি , ই, এফের তখনও ইঁট বসছে। মাঝখানে একটা গোল মতো কমপ্লেক্স। কদিন আগেই সেখানে প্রথম কনভোকেশন হয়েছে আইসারের, সামনে একটা গোল সবুজ চত্বরে কটা ফুলের টব লাগিয়ে আর কনস্ট্রাকশন ঢাকা দিতে নীল কাপড়ের প্যান্ডেল খাটিয়ে। কনভোকেশন ভেনু নাকি এখন আমাদের ক্যান্টিন! বাস থেকে কাদা প্যাচপ্যাচে রাস্তায় নেমে, ব্যাগ-পত্তর নিয়ে তখন আমরা রুম খুঁজতে ব্যস্ত। এর মধ্যেই কারা য্যানো রব তুলেছে, হোস্টেলে ল্যান তো দূরের কথা ওয়াই-ফাই ও নেই। তখন কিন্তু জিও ছিলনা, সেটা মাথায় রেখে। যাই হোক, ছেলে-মেয়েদের একটাই হোস্টেল এটা ডিসকভার হওয়াতে অনেকেই ইন্টারনেটের দুঃখ বেমালুম ভুলে দিল। কুছ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা পাড়তা হ্যা জনাব ! রুম -টুম একটু গুছিয়ে, ক্যান্টিনের ভেজ-থালি খেয়ে আসতে আসতে তখন অলরেডি রাত নেমে এসেছে ইসার মোহনপুরে। ছাদে যাওয়ার দরজা খোলা আছে দেখে আমি সি উইং -এর ছাদে গেলাম। একা লাগছিল খুব, বাড়ি ছেড়ে সেটাই হোস্টেল-জীবনের প্রথম রাত। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক চারদিকে নিস্তব্ধতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছিল যেন আরও। মাথার ওপর খুঁজে পেলাম একটা ইয়াব্বড়ো আকাশ।কাল কুচকুচে একটা চাদর যেন ঢেকে রেখেছে ক্যাম্পাস টাকে। তারা গুলো একদম টুনি বাল্বের মতো জ্বলজ্বল করছে। মনে পড়ে গেল সেই গ্রীষ্মের লোডশেডিংয়ের রাতগুলো। কারেন্ট চলে গেলে আমরা ছাদে চলে যেতাম। হ্যারিকেনের আলোয় নমো নমো করে কয়েকটা পাতা উল্টে বাবাকে বলতাম, হয়ে গেছে। নারকেল দড়ির খাটে বসে তখন ঠিক এমনি হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম আকাশটার দিকে। বাবা আঙুল ধরে চিনিয়ে দিত সপ্তর্ষি মন্ডল, কালপুরুষ। এইতো, এইতো আমিও খুঁজে পেয়েছি, সেই জিজ্ঞাসা চিহ্ন টা। আইসারের আকাশে। সেই আকাশ টাই আমার প্রথম বন্ধু ছিল আইসারে। কলেজের প্রথম প্রেম।

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। আর আইসারের বারো মাসে তেইশ। মা সরস্বতী থেকে গণপতি-বাপ্পা, উৎকল দিবস থেকে ওনাম, দিওয়ালি থেকে আগমনী - এখন কোনটা নেই আমাদের ক্যাম্পাসে? কিন্তু আমি তো পুরানো সব গপ্প শোনাচ্ছি। ফ্ল্যাশ-ব্যাকে চলে যাই। ফার্স্ট ইয়ারে যখন আমরা এনএসসিবিতে , সব সিনিয়ার দাদারা তখনো এপিসি রয়ে। সেমিস্টারের প্রথম ফাস্টিভিটি ছিল জন্মাষ্টমী। জন্মাষ্টমীর আগের দিন রাতে, হোমরা-চোমরা কজন সিনিয়র এসে লাইন দিয়ে দাঁড় করাল আমাদের। ভয়ে অধিকাংশেরই নাড়ি বগলে। যতই বলুক ডিন, ৱ্যাগিং-ফ্যাগিং কিছু নেই এখানে; ডর সাবকো লাগতা হ্যা, গলা সাবকা শুখতা হ্যা! দাদারা বললো পরদিন সক্কালে, সাতটায় , বালতি-গামলা নিয়ে এপিসি রয়ে হাজির হতে। থরহরিকম্প আমরা ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলে। বাড়ি-ছেড়ে হোস্টেলে এসে যে নবাব-পুত্তুরদের নটায় ঘুম ভাঙাতে পাঁচটা আল্যার্ম লাগে, সব্বাই ছটায় উঠে রেডি! মিরাকেল! সাইকেলে, হেঁটে কিম্বা ঠেলায় চেপে সব চলেছে এপিসি রয়। এপিসির উইং গুলোর মাঝখানটায় সবুজ এক টুকরো লন, সেখানে জমায়েত আমরা। বাঙালির ঘরে জন্মাষ্টমী মানে বাল-গোপালের পুজো আর প্রসাদে লুচি-সিন্নি -এটুকুই সিলেবাসে। সকাল সকাল গামলা-বালতি নিয়ে আমরা কেন হাজির - এক্সাক্টলি কী যে এজেন্ডা - ঠাওর করতে পারিনি তখনও। ইন্সট্রাকশন এলো দুদলে ভাগ হয়ে যাও ছোকরা রা। একদল বাথরুম থেকে বালতি বালতি জল সাপ্লাই দেবে। আরেক দল সেই জল দিয়ে ঘাসের কার্পেট ভিজিয়ে, গোড়ালির কেরামতিতে কাদা বানাবে। আর কাদায় যতক্ষণ না ফুট-খানেক পা ঢুকে যাচ্ছে, ততক্ষন অব্দি শ্বাস নেয়াও মানা। এমন সময় হোস্টেলের দুতলায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দড়ি খাটানোর তোড়জোড় দেখে, ফাইনালি কেসটা খোলসা হলো। মটকি-ফোড তাহলে! জাহাঙ্গির দার সাপ্লাই দেওয়া ফাটা স্পিকারে অলরেডি জোর গান লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে - গো গো গো গোবিন্দা! সেই কলরবে সবে এপিসি রয়ের ঘুম ভাঙছিল বোধ হয়। কিন্তু ততক্ষনে আমরা হেব্বি ফুর্তিতে কাদা-উৎসবে নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছি । ঘন্টা খানেক পরে যখন কাদা প্রায় হাঁটু ছুঁই ছুঁই, দহি-হান্ডির দল ভাগাভাগি শুরু হল। ফার্স্ট, থার্ড আর ফিফথ ইয়ারের একটা টিম, অপোনেন্ট হল গিয়ে সেকেন্ড আর ফোর্থ। পালা করে একদল যখন হিউম্যান-পিরামিড বানায়, অন্য টিম তখন ততোধিক ইন-হিউম্যান পদ্ধতিতে, কাদা ছুঁড়ে, কখনো বা বালতি ছুঁড়ে তাদের ডিসব্যালেন্স করার চেষ্টা করে। সে এক মজার দৃশ্য! কারা শেষ-মেষ জিতেছিল আমার মনে নেই, তবে সেদিন কীভাবে ওই কাদা ডোবায় -ফ্রেসার্স থেকে ফাইনাল ইয়ার -সক্কলে একসাথে, কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, সেটাই মনে পড়ে। মনে পড়ে, কীভাবে দহি-হান্ডিটা ভাঙার সাথে সাথে সেদিন আমাদের মন-গড়ন ঐ সিনিয়র-জুনিয়রের 'ফুড পিরামিড'-টাও ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিল। আমাদের মোহনপুর ক্যাম্পাসে পাঁচ বছরের একাডেমিক-ননএকাডেমিক লাইফটায় সেই সিনিয়ররাই ধ্রুবতারার মতো পথ দেখায়। শাসন করে, আবার বুকে টেনে নিয়ে ভালোও বাসে। প্রতি বছর পুরানো কটা মুখ ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যায়; প্রি-ফ্যাবের দিগন্তে সূর্যাস্তের মতো। দেখে মন-কেমন করে। আবার, নতুন জুল-জুলে কটা চোখ এসে আইসারের কড়া নাড়ে। সম্ভাবনাময়। এল-এইচ-সির ওপরদিয়ে ওঠা সূয্যির মতন। একা আকাশটা সাক্ষী থেকে যায়।

পুরানো ক্যাম্পাসের একদম আইকনিক প্লেস ছিল কাঠের সাঁকোটা। জেসি বোস থেকে বেরিয়ে এপিসি রয় হোস্টেলের দিকে এগোলে পড়ে এই সাঁকো। ক্যাম্পাসের সবচেয়ে রোম্যান্টিক স্পট নিঃসন্দেহে ওটাই ছিল। কালী পুজো পেরিয়ে একটু শীত পড়তে না পড়তেই শুরু হতো কুয়াঁশা। সন্ধ্যে হলেই এমন কম্বল পেতে জাঁকিয়ে বসত, দশ ফুট দূরে দেখা দুষ্কর।সেই কুঁয়াশায় মাখামাখি হয়ে, গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে, একদম মায়াবী লাগতো সাঁকোটা। সাঁকোর পাশেই ছিল আমাদের গাজিবো -"হাট"। ক্লাবের প্রথম মিটিং থেকে আইসারের অগুনতি কপোত-কপোতীর প্রথম ডেট - সবকিছুর সাক্ষী ওই হাট। আর যদি আমার কলেজের সবচেয়ে মেমোরেবেল জায়গাটার কথা বলতে হয়, তাহলে শোনাতে হবে বিসিকেভি অডিটোরিয়ামের গপ্প। ক্লাব ওরিয়েন্টেশান থেকে ফ্রেসার্স ওয়েলকাম , প্রথম মুভি নাইট থেকে টিচার্স ডে পারফর্মেন্স, "আর্সেনিক এন্ড ওল্ড লেস" থেকে "ওয়েডিং অ্যালবাম" - কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি? এনুয়াল ড্রামার আগে রাতের পর রাত চলতো আমাদের রিহার্সাল। ডিনার করতে যাবার সময় হতোনা সিভি রামন উর্ফ এনেক্স ক্যান্টিনে গিয়েও। তাই তিন নম্বর গেটের বাইরে "চাইনিজ" থেকে আসতো ফ্রাইড রাইস-চিলি চিকেন । কিংবা মা লক্ষী থেকে প্যাক করিয়ে রুটি-তড়কা নিয়ে আসতাম কেউ গিয়ে। ব্রেক টাইমে স্টেজের ওপরেই গোল করে বসে হতো খাওয়া দাওয়া। রিহার্সাল শেষ হতে হতে বেজে যেত একটা দুটো। "ঐ" ক্যাম্পাস যাওয়ার এগারোটা পঁয়তাল্লিশের শেষ বাসটা একদিনও ধরতে পেরেছি বলে মনে পড়েনা। অগত্যা হাঁটা লাগাতাম সবাই মিলে। শর্ট কাট রাস্তাটা ছিল এল ই এলের পেছন দিয়ে, একদম সোজা গিয়ে উঠতো এস বি আই গ্রাউন্ডের সামনে। তারপর এম এন সাহা পেরিয়ে, লালবাতির সামনে বাঁকটা নিলেই চোখে পড়তো সেই দৃশ্যটা। দূর থেকে দেখা যেত আমাদের হোস্টেলের টিম টিমে লাইট। তারায় ভরা আকাশের নীচে, হোস্টেলের জানলা দিয়ে ঠিকরে পড়া ওই আলো একটা অনবদ্য ফ্রেম দিত। দুর্গা পুজোর আগে, ঠিক ঐখানটায় , মাঠ গুলো ভরে যেত কাশফুলে। পেঁজা তুলোর মত বুনকা বুনকা সাদা মেঘ শরতের নীল আকাশটাকে একটা ক্যানভাস বানিয়ে নিত। হাওয়ায় মাতাল কাশফুলের সাথে সবুজ ঘাসের মিতালি। ব্যাকগ্রউন্ডে দাঁড়িয়ে থাকতো আমাদের আইসারের উঠতি ক্যাম্পাস। পাঁচটা বছরে দেখতে দেখতে কত বদলে গেল আমাদের ক্যাম্পাস। এখন কি আর আদেও ওখান থেকে হোস্টেলটা দেখা যায়? হয়তো গেস্টহাউস আর ফ্যাকাল্টি হাউসিংয়ে ঢাকাই পড়ে গেছে! কিন্তু একটুকুও বদলায়নি আকাশটা। ক্যানভাসটা আজও একই আছে।

এপ্রিল ১৫। বাঙালির নববর্ষ। আমার আইসারের প্রথম নববর্ষের কথা মনে পড়ে।সেকেন্ড সেমিস্টার। তখন আমাদের ক্লাস হত এলএইচ ফোরে, মানে ক্যান্টিনের ওপর তলায়। বেসমেন্টে মার্কেট কমপ্লেক্স-জিম-ড্রামা রুম কিছুই রেডি হয়নি, ওটা তখন ডিজে নাইট ভেনু। দিনের ফার্স্ট হাফে প্রাকটিক্যাল থাকতো ; বায়োলজি আর কম্পিউটার ল্যাব ছিল পুরানো ক্যাম্পাসেই। বাসে ভিড় হতো প্রচুর আর বাস ধরতে গেলে ঘুমের খাতায় এক্সট্রা পনেরো মিনিটের ঘাটা। তাই, সাইকেল করে ওদিকের ক্যাম্পাসে যেতাম; ব্রেকফাস্ট হতো গণেশদার দোকানে। তো, প্রথম নববর্ষের গপ্প বলছিলাম। সেই নববর্ষে নতুন জামার আবদার ছিলনা, ছিলনা ভাতঘুমের অবকাশ। কিন্তু এই শর্মা পয়লা বৈশাখ উদযাপনে ত্রুটি রাখার পাত্র না! বায়ো ল্যাব শেষ করে দৌড় দিলাম তিন নম্বর গেটের বাইরে, সটান গিয়ে হাজির 'অন্নদা'য়। খান-চারেক রাজভোগ আর এক ভাঁড় লাল মিষ্টি দই সাবাড় করে সম্পন্ন হল বৈশাখী পেট পূজা। 'অন্নদা'র সেই মিষ্টি দইয়ের স্বাদ যেন আজও জিভে লেগে আছে। এখন সাত নম্বরে বাদলদার দোকানে যারা দুধের সাধ ঘোলে মেটায়, তাদের জন্য রইল আমার এক ভাঁড় সমবেদনা। বৈশাখের গল্প বললে, কালবৈশাখী গুঁতো মারে মনের ভেতর। এপ্রিল শেষের গুমোট গরম। এন্ড-সেম দরজায় এসে জোর ধাক্কা দিচ্ছে। ভ্যাপসা দুপুরের পর বিকেল সাড়ে তিনটে -চারটে বাজতে না বাজতেই ঘন কালো মেঘ উঁকি মারে আইসারের ঈশান কোণে। কিউমুলাস থেকে কিউমুলোনিম্বাস। আচমকাই রোদের শেষ রেখাটুকু বিলীন হয়ে নেমে আসে আঁধার। মরসুমের প্রথম কালবৈশাখী আছড়ে পড়ে ক্যাম্পাসে। ওঠে ধূলো-ঝড়। হাওয়ায় ডাস্টবিন গুলো হোস্টেলের করিডোরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হুমড়ি খায়। কাঁচের জানলা গুলো পবন দেবের রোষের সামনে দুহাত তুলে সারেন্ডার করে। আমরা গামছা পরে রেডি থাকতাম, বৃষ্টির প্রথম ছিঁটে -ফোঁটা গায়ে মেখে নেব বলে। বৃষ্টি নামলে সেই সোঁদা মাটির গন্ধ উঠতো - জিওস্মিন। সেই ম-ম গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে আমরা চাতক পাখির মতো বৃষ্টির জল চেখে নিতাম। ঘন্টা খানেকের তান্ডব শেষ হলে, চারদিকটা একদম স্নিগ্ধ-সবুজ হয়ে ধরা দিত। কথায় বলেনা? ঝগড়ার পর খুব প্রেম পায়। সেই প্রেমের টানেই চপ্পল পায়ে বেরিয়ে পড়তাম আমি, গায়ে এসে লাগতো স্বস্তির শীতল হাওয়া। বৃষ্টি-ভেজা আইসারের আকাশটায় কখন যে ঝুপ করে সন্ধ্যে নেমে আসতো, খেয়াল করতে পারতামনা ।