বেভূ। |
আরে, ভাই কেমন আছিস? তোর মানু ভাইতো ভুতেদের জন্য সেরা কাজ করছে। |
ভভূ। |
মানুভাই থাকতে কি আর খারাপ থাকতে পারি বল? এই যেমন ওই দিকেরজলাজমিটা কি সুন্দর প্রমোটার এসে দখল করে নিলো। আগে হলে ভয়দেখানোর চেষ্টা হতো। |
বেভূ। |
এখন কি ভয়ই দেখানো যাই না নাকি? |
ভভূ। |
তা যাবে কি করে?, সব ওঝা তান্ত্রিক এমন লেলিয়ে দেবে তুমি খুঁজেও পাবেনা নিজেকে। |
বেভূ। |
এসব ওঝা তান্ত্রিকদের ছাড়া বেয়াড়া লোকগুলোকে কে সামলাবে?, এসবএক-দুটো পুকুরতো যাবেই । পুকুর গেলে মানুষদের সাথে আমদের সখ্যতা হচ্ছে, ওদের জায়গাতেও আমরা আশ্রয় পাবো, ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা একটু ভাবাওউচিত। |
ভভূ। |
কিন্তু দিনে দিনে যা হাল হচ্ছে,পুকুর, ঝিল, সাঁকো সব মানুষদের হাতে তুলেদেওয়ার পরিকল্পনা করেছে এই আমদের মানুবাবু। আমরা খাবার পাবো কোথাথেকে মানুষদের বানানো নানা ভেড়ি থেকে? |
বেভূ। |
বেঁচে থাকলেতো খাবার নিয়ে মাতামাতি করবি? |
ভভূ। |
কে আমাদেরকে মারবে? |
বেভূ। |
কেন শাঁকচুন্নি?, ওরা পুরো উইপোকার মতো আমাদের এই ভৌতিক সমাজকেএমন ভাবে খেয়ে ফেলছে, যে আমাদের দুর্দশার সব কারন ওই সেঁকোরা। এইভেড়ি, ওই দিকের ঝিল আমাদেরি, আর ওরা বহিরাগত হয়ে আমদের একিসুযোগ পাচ্ছে, এটা কি ঠিক ভায়া ? |
ভভূ। |
কিন্তু তা বলে এই ভাবে প্রোমোটারকে দিয়ে দিলে কি ভাল হয়? আমাদের কিএমনি ভূত বানিয়েছে? এই বাস্তুতন্ত্র ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদেরওতো ক্ষতি হচ্ছে। আজ বাদ দিয়ে কাল, তুই যে ভেড়ি থেকে মাছ খাস, দেখবি সেটাও মানুষের হাতে চলে গেছে। তাছাড়া, গেলো বছর, যখনমানুবাবু পুরনো চিতাভস্ম বাতিল করলো, শ্মশান ছেড়ে আমরা এদিকে চলেএলাম, ওই দিকের ভেড়িগুলো প্রায় নষ্ট হয়ে গেলো। সবার ফলে আজ এইঅবস্থা। |
বেভূ। |
দেখ মানুবাবু হলো, ভূতেদের স্বপ্নপুরনের ফেরিওলা। একবার ওই সেঁকোদের শায়েস্তা করতে দে দেখবি, কত ভেড়ি পড়ে আছে তোর জন্য। |
ভভূ। |
বুঝে গেছি ভাই, এই নতুন ভৌতিকবাদ তোমায় গ্রাস করেছে বন্ধু, না ভাই আমার কাজ আছে আসি বুঝলি। |
[ভভূ প্রায় দৌড়েই প্রস্থান করলো] |
|
বেভূ। |
যেদিন তোর ঘর, এই সেঁকোর বাচ্চারা দখল করবে তখন বুঝবি, তখন মনেপরবে আমার কথা। ও ছেভূভাই!! |
|
[ছেভূর প্রবেশ, হেটে পেরোচ্ছিলো, ছেভূ বড্ডো বেশি ভৌতিক সাজগোজ] |
ছেভূ। |
আরে, বেভূ, সব ঠিক? |
বেভূ। |
ঠিক হবে না মানে?, মানু আছে তো সব সম্ভব। জগতে আমরা মেছোরানতুন করে আসন লাভ করতে চলেছি। |
ছেভূ। |
আর কদিনের মধ্যে আমরা ওই শ্মশানের শিরিষ গাছের জায়গাটা পেয়ে যাবো।শালা সেঁকোর বাচ্চাগুলো বাইরে থেকে এসে আমদের জায়গা দখল করবে?ওখানে আমাদের আদিভূতের বাসস্থান। |
বেভূ। |
একটা ছোট্টো প্রশ্ন আছে আমার মনে, আমাদের এই আদি ব্যাপারটা নিয়ে? |
ছেভূ। |
করে ফেল, আমাদের প্রাচীন কতো ঐতিহ্যময় আমাদের জানা দরকার। সেঁকোরজন্য আজ সব ধংসস্তুপে। |
বেভূ। |
ধংসস্তুপের ব্যাপারে প্রশ্ন আছে, পরে করছি। আগে এটা বলি, আমরা যখনএসেছিলাম তখন এখানে মগ জলুদস্যুদের ভুতরা থাকতো, তারা এখনও আছে।তারা যদি আমদের সাথে বহিরাগত ভেবে ব্যবহার শুরু করে, তখন আমরাপ্রবলেমে পড়বো না? |
ছেভূ। |
এটা হবেই না । মানুর লোকজন এমন ভেরী বাজাবে না, পুরো ইতিহাস পাল্টে যাবে । নতুন প্রজন্ম নতুন ইতিহাস শিখবে, নতুন রূপ দেওয়া হবে এই সমাজকে। |
বেভূ। |
তারমানে, যে যে শাঁকচুন্নিরা আমাদের সাহায্য করেছে, এই ভেড়ির ধারে, এই ঝিলের পাশে, আমাদের সুবিধার জন্য যা করেছে, আজকেও যারা করছে, তারা সবাইকে এক লহমায় অস্বীকার করা হবে? |
ছেভূ। |
কি করা যাবে?, তোর আমার অনেক বন্ধু আছে, বাট এটা অনেকটা কোলেটারেল ড্যামেজ টাইপের। আমরা লড়ছি আমাদের ভবিষ্যৎ যাতে খুশি থাকে।ব্যাপারটা বো... |
[লিভূর প্রবেশ] |
|
লিভূ। |
তোর ভবিষ্যতকে আগে খুশি রাখ,তারপর আগামী প্রজন্মের কথা ভাববি । কদিন বাদে নিজে খেতে পাবি না, প্রজন্মকে খাওয়ানর স্বপ্ন দেখছে। |
ছেভূ। |
তোর দাবিটা কি? ভালো করে দেখ, মিত্তিরবাড়ির ভাঙ্গা বাড়ি, যেখানেসেঁকোগুলো লাফাচ্ছিলো, কেমন শায়েস্তা করল দেখলি? |
লিভূ |
ওই বাড়িতো কদিনের মাথাই প্রোমোটারের হাতে তুলে দেবে, ভূতগুলো যাবেকোথায়? আর ওই মিত্তিরবাড়িতে একটা মাত্র ঝিল, সেখানকার অন্নের জন্যওটা দখল করা দরকার। এই দিকে একের পর এক ভেড়ি বুজিয়ে ঘরবানানো হচ্ছে,তারবেলা? |
বিভূ। |
তুই হলি, অ্যান্টিভূত। কি বুঝবি আমরা মেছভূতেরা কষ্টে রয়েছি? আমাদের জমি জায়গা, আমরা এখানে থাকছি, ওদের অ্যালাও করব কেন? |
লিভূ। |
ও বাবা, তুমিও? আর হবে নাই বা কেনো? রাত্রিবেলা যেসব জায়গাই, ভূতেদের দুনিয়ার খবর পাওয়া যাই, সেখানে একটাই টপিক, সেঁকো মেছো-র দ্বন্দ্ব। |
ছেভূ। |
তুই নিশ্চয় ওই, বাবলাতলায় রাবিশ খবরগুলো শুনতে যাস, ও কোনোদিনোএই সমস্যাটা তুলে ধরবে না। ওরা চলে গেলে পুরো ডেমোগ্রাফি পালটে যাবে,আমাদের সুযোগ বাড়বে। |
লিভূ। |
বৈষ্ণবগুলো যারা গাছের ফল খেয়ে থাকে তাদেরও অবস্থা খারাপ।ভূতেদের খাবার জায়গাগুলো যেখানে সেঁকোদের দেখা পাওয়া যায় না, সেখানেএরকম হালত কেনো? |
ছেভূ। |
বাকি জায়গাগুলোর ক্রাইসিস তো, তাই আর কি? |
লিভূ। |
আমরা জলে ডুবে মরে মেছো ভূত হয়েছি, আর ওই মানুর লোকেদের কথাশুনে তোমার লজিকও পঞ্চত্বপ্রাপ্তি পেয়েছে । খোঁজ নিয়ে দেখ কি ধরনের ভূতহয়েছে লজিকটা। |
ছেভূ। |
দুদিন অপেক্ষা কর, সব ঠিক করে দেবে মানু আর কানু। |
লিভূ। |
মানুদার লোকজন ভালো কাজ করেছে, আজকে ওই দিকের ঝিলটা সৌন্দর্যায়নের ব্যাপারে নাকি মানুষদের দিয়ে দিয়েছে দেখলাম, বেশ ভালই হবে, আমাদের জায়গাটা একটু দেখতে ভালো লাগবে। |
বিভূ। |
সৌন্দর্যায়ন না ছাই?ভোররাতে ওখানকার ডালিমগাছে বসে আমি হাওয়াখেতাম, সে আর হবে না। মর্নিং ওয়াক করতে আসবে, লাফিং সেশন করবেদুপুরবেলা বিকেল বেলা প্রেম করবে, ওখানকার ভূতগুলো তো গেলো। কি রেছেভূ, তোর ফ্যামিলি ওই ঝিলের ধারে থাকে না, ইনফ্যাক্ট, তোর ভাইতো ওখান থেকে খাবার নিতো? |
ছেভূ। |
ইয়ার্কি নাকি, আমাদের মতামতের দাম নেই, ঝিলটা দিয়ে দিল, জানতেও পারলাম না। আমি একা কি ভাবে চালাবো? আমি এখন আসছি, তোর সাথে পরে এ ব্যাপারে কথা হবে। |
[ছেভূর প্রস্থান] |
|
বেভূ। |
ওর ফ্যামিলি? |
লিভূ। |
গেলো বছর, ওই বন্যাতে ওরা দু ভাই, আর ওর মা এক সাথে পটল তুলেছিল। |
বেভূ। |
এ বাবা, এখন কি করবে ছেভূদা? |
লিভূ। |
মানুদার নাম বলতেই অজ্ঞান, দেখো কে বাঁচায়? কারুর নিজের ঘর নাপুড়লে চৈতন্য হবে না। সব মানুনাম জপ করছে। |
বেভূ। |
মানু ছাড়াও তো কোনো বিকল্পও নেই। |
লিভূ। |
থাকবেই বা কি করে? তোমার মতো লোকগুলো তাদের অ্যান্টিভূত তকমাদিয়ে দেবে। |
বেভূ। |
আমরা জানবো কি করে? কি হচ্ছে, যেখানেই ভুতেদের খবর জানতে চাই সেখানেই মানুর কথা? |
লিভূ। |
আসল সমস্যা এর থেকেও বড়ো। তুই একটা কথা বল, এই যে জলাজমিবুজিয়ে গাছ কেটে মানুষ যে কাণ্ড করছে, এর পরিনাম তো, পড়ে এসেছিস বাজেনে এসেছিস, কি বলতো? |
বেভূ। |
গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এর ফলে সমুদ্রের জলস্ফীতি, মানে প্লাবন, মানে... |
লিভূ। |
কিছুই না, ধীরে ধীরে মেছো ভূতের সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু তাদের খাওয়ার মতো, থাকার মতো, এই মিস্টি জলের ঝিল, মাছের ভেড়িও থাকবে না। |
বেভূ। |
তারমানে ভূতেরা টিকবে কি করে? আমরা মরে আবার মানুষ হতেও পারব না। পৃথিবী তো তখন আর বাসযোগ্য থাকবে না। আমরা হবো কি? |
লিভূ। |
আমার একটা থিওরি আছে। আমরা ভূত স্পেস থেকে মনুষ্য স্পেসে যাতায়াতকরবো। |
বেভূ। |
মানে ইনসেপশন মুভিতে লিম্বোর কথা যেমন বলেছিলো। |
লিভূ। |
আমার তাই মনে হয়। তবে এসব না করে, আমাদের যারা সনাতন ভূতবিশেষজ্ঞ তাদের জিজ্ঞেস কর, যেমন ছেভূদা। তবে এখন না, কারন নিজেইলিম্বোতে আছে। |
বেভূ। |
ছেভূদার মতো লোকের চোখ খুলেছে, বাকিদেরও খুলবে, ওই দেখো ওই ঝিলেরদিকে সারি সারি ভূত এগিয়ে যাচ্ছে। আমি যাই, দেখি কি হচ্ছে। তুমি যাবেনা? তুমি তো ওখানে মাঝে মাঝে ভোররাত কাটাও। |
লিভূ। |
না আমার একটা কাজ আছে, তোরা লড়াই কর, পরে আসছি। |
[লিভূর প্রস্থান] |
|
বেভূ। |
বাতেলাবাজ বটে একখানা। তবে এরকম অ্যালার্ম ক্লক থাকাও দরকার। |